অক্টোবর ২৬, ২০২৪
সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়: দীর্ঘ ১৩ বছর পর বিজ্ঞান, আইসিটি ল্যাব ও লাইব্রেরি পেলো শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিনিধি : দীর্ঘ ১৩ বছর পর বিজ্ঞান ল্যাব, কম্পিউটার রুম, লাইবেরি, কমন রুম, নামাজ কক্ষ, ডিবেটিং ক্লাব ও পূজা উদযাপন রুম পেয়েছেন সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোযোগী করতে অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিয়েছেন বিদ্যালয়ে নব-নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আনিছুর রহমান। জানা গেছে, সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুনের বদলীজনিত কারণে গত ০৭ আগস্ট ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মোঃ আনিছুর রহমান। গত ২৪ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক-১ দূর্গা রাণী সিকদার স্বাক্ষরিত এক পত্রে মোঃ আনিছুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষদের পদে দায়িত্ব দেয়া হয়। দয়িত্ব প্রাপ্তির পর থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আনিছুর রহমান বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিতে শুরু করেন। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে তিনি বিদ্যালয়ের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছেন। যার মধ্যে- নিয়মিত সবগুলো ক্লাস গ্রহণসহ বিদ্যালয়ের ভেঙে পড়া শৃঙ্খলা ফেরানো অন্যতম। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগ বাড়াতে প্রতিষ্ঠানটির তৃতীয় তলার একটি কক্ষে (৩০৩ নং) লাইব্রেরি স্থাপন করেছেন। লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীরা যাতে রুটিন অনুযায়ী নির্বিঘেœ বই পড়তে, বই নিতে এবং বই জমা দিতে পারে সেজন্য সুনির্দিষ্ট কমিটি করে সেটা পরিচালনা করছেন। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ‘তারা নিয়ম অনুযায়ী লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়তে পারছেন, বই সংগ্রহ করতে পারছেন এবং তা সময় অনুযায়ী জমাও দিচ্ছেন। এতে কারো কোন প্রকার অসুবিধা পোহাতে হচ্ছে না’। তারা আরো জানান, ‘তাদের বিদ্যালয়ে ইতিপূর্বে লাইব্রেরি ছিল না। নতুন প্রধান শিক্ষক তাদের যে কক্ষে লাইব্রেরি স্থাপন করে দিয়েছেন সে কক্ষটি পূর্বের প্রধান শিক্ষক জনাব আব্দুল্লাহ আল মামুন তার পরিবারের বসবাসের জন্য ব্যবহার করতেন। তবে নতুন লাইব্রেরি হয়ে আমরা নতুন নতুন বই পড়ে অনেক কিছুই জানতে পারছি। এতে আমাদের মোবাইলের আসক্তি কেটে লেখাপড়ায় মনোযোগ বাড়াচ্ছে’। সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ‘বিগত ১৩ বছরে বিদ্যালয়ের বেরকারি ফান্ড সমূহ প্রধান শিক্ষকদের হাতেই থাকতো। বর্তমানে নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যোগদানের পর সম্পাদকমন্ডলীর মাধ্যমে বেসরকারি ফান্ড সমূহ উপ-কমিটির করে সেই কমিটির মাধ্যমেই পরিচালিত হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক সেগুলো সুপারভিশন করেন’। সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০৩ নং কক্ষে আইসিটি বিষয়ে শিক্ষা পরিচালনা করা হচ্ছে। সেখানকার শিক্ষক আসাদুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ‘২০১২ সালে বিদ্যালয়ে একটি সমৃদ্ধ আইসিটি ল্যাব ছিল। কিন্তু বিগত সময়ে তা রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সবগুলো কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এসে রুমটি সংস্কার করে কয়েকদিন আগে ৫টি কম্পিউটার দিয়ে আপাতত আইসিটি ল্যাবটি চালু করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এখানে আরো ১৫টি কম্পিউটার স্থাপন করা হবে। দেখা গেছে আইসিটি রুমের পাশেই একটি রুমে শিক্ষার্থীদের কমন রুম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা অফ-পিরিয়ডে অবসর সময় কাটাতে আসে। এছাড়া বিদ্যালয়ের পুকুরের পশ্চিম পাশের ভবনে ৩০৪ নং রুমে একটি সমৃদ্ধ বিজ্ঞানাগার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্বাস আলী সরদার, মামুনুর রশিদ ও মোস্তফা মনিরুজ্জামান আধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন। শিক্ষকরা জানান, ‘নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনায় বিজ্ঞান ল্যাবে প্রতিদিন প্রভাতী ও দিবার প্রতি শিফটে দুটি করে ক্লাস নিয়মিত নেওয়া হচ্ছে’। সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক অমিত কুমার ঘোষ জানান, ‘সম্প্রতি আমার মেয়ে নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে। আগে মাঝে মাঝে সাধারণ ড্রেস পরে স্কুলে গেলেও বর্তমানে স্কুলের ড্রেস কোড অনুযায়ী স্কুল ড্রেস পরে স্কুলে যাচ্ছে। বাড়িতেও পড়ালেখায় হঠাৎ মনোযোগী হয়েছে। আগে বাড়িতে মোবাইল নিয়ে বেশি সময় কাটাতো, এখন বই নিয়েই বেশি সময় কাটাচ্ছে। পিতা হিসেবে বিষয়টি আমার খুব ভালো লেগেছে’। সার্বিক বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আনিচুর রহমান জানান, ‘সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়াতে যা যা করণীয় তা করার চেষ্টা করছি’। তিনি আরো জানান, ‘শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম সহ তাদের জন্য আধুনিক বিজ্ঞান ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব, ক্রীড়া, নামাজ, পূজা, কমন রুম, সাংস্কৃতিক, মুদ্রন, ম্যাগাজিন, দারিদ্র তহবিল, কৃষি বাগান, পরিচয়পত্র, লাইব্রেরি, রেড ক্রিসেন্ট, ল্যাব গবেষণা, নবীন বরন, গার্লস গাইড, চিকিৎসা, পরীক্ষা, ভর্তি, শৃঙ্খলা, হোস্টেল, অভ্যন্তরিন অডিট, বেসরকারি কর্মচারি, বেতন জমা, রুটিন কমিটি সহ বিবিধ কমিটি গঠন করে শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি আগামীতে সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান আর নিম্নগামী না হয়ে উত্তরোত্তর ঊর্ধ্বগামী হবে।’ 8,537,889 total views, 5,221 views today |
|
|
|